দ্বিধাহীন সংকোচহীনভাবে ও জোরালোভাবে এই কথা বলা যায় যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে ব্যাপক, দুনিয...
দ্বিধাহীন সংকোচহীনভাবে ও জোরালোভাবে এই কথা বলা যায় যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে ব্যাপক, দুনিয়ায় ও আখেরাতের শক্তিশালী কল্যাণকর দাওয়াত হইতেছে তাবলীগ জামাতের দাওয়াত। এই দাওয়াতের কেন্দ্রস্থল বা মারকাজ দিল্লীর নিজাম উদ্দিনে অবস্থিত।ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাক। বিভিন্ন প্রকার দাওয়াত, আন্দোলন, বিপ্লবাত্মক ও সংস্কারমূলক প্রচেষ্টার ইতিহাস হইতে জানা যায়, কোন দাওয়াত ও আন্দোলনের কিছুকাল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাহার কর্মপরিধি ব্যাপকতা লাভ করে। (বিশেষত যখন সেই দাওয়াত ও আন্দোলনের কার্যকারিতা, প্রভাব এবং নেতৃত্বের কল্যাণময়তা দৃষ্টিগোচর হয়) এরপর সেই দাওয়াতের ও আন্দোলনের দুর্বলতা ত্রুটি বিচ্যুতি সঠিক ও ভুল উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে অমনোযোগিতায় প্রবেশ ঘটে। ফলে সেই আন্দোলনের কল্যাণকর দিক ও প্রভাব নষ্ট হইয়া যায়। (আমার যতটা অভিজ্ঞতা) তাবলীগী দাওয়াত এখন পর্যন্ত ঐ সব বড় রকমের সংকট হইতে উত্তরণ লাভ করিয়াছে (নিরাপদ রহিয়াছে) ইহার মূলে রহিয়াছে আত্মত্যাগ ও কোরবানীর প্রেরণা, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির প্রত্যাশা সাওয়াবের আগ্রহ, ইসলাম ও মুসলমানদের মর্যাদার স্বীকৃতি, বিনয় ও নম্রতার প্রকাশ, ফরজ সমূহ পালন করিবার প্রতি মনোযোগ। ইহাছাড়া আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে উন্নতি লাভের আকাঙ্ক্ষা, আল্লাহর জিকিরে অভিনিবেশ ও ব্যগ্রতা। অপ্রয়োজনীয় ও অকল্যাণকর কাজকর্ম ও ব্যস্ততা হইতে যথাসম্ভব দূরে থাকা। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর পথের সফর এবং দুঃখকষ্ট সহ্য করা।তাবলীগ জামাতের এই বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্রের মূলে রহিয়াছে এই জামাতের প্রথম দাওয়াত যিনি দিয়াছিলেন তাঁহার এখলাছ, আল্লাহ তায়ালার প্রতি নিবেদিত মনোভাব, তাঁহার দোয়া, অন্তহীন চেষ্টা সাধনা, আত্মত্যাগ। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মাওলানা ইলিয়াস রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাবলীগী জামাতের কর্ম প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলিয়া বিবেচনা করিয়াছিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির ব্যাপারে তিনি সব সময় গুরুত্ব আরোপ করিতেন এবং এই কথা প্রচার করিতেন। এছাড়াও যেই সব বিষয়ে মাওলানা মরহুম সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করিয়াছিলেন, সেই গুলি হইতেছে কালেমা তাইয়্যেবার অর্থ ও কালেমার দাবীর ব্যাপারে চিন্তা গবেষণা, ফরজ ও অন্যান্য এবাদতের ফজিলত সম্পর্কে জ্ঞান, এলেম ও জিকিরের ফজিলতের প্রতি গুরুত্বারোপ, আল্লাহর জিকিরের প্রতি মনযোগ, একরামে মুসলেমিন অর্থাৎ মুসলমানদের সম্মান করা, মুসলমানদের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তাহা আদায় করা, প্রতিটি কাজে নিয়ত ঠিক করা, এখলাছের অনুশীলন, অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ ত্যাগ করা, আল্লাহর পথে বাহির হওয়া এবং সফর করিবার ফজিলত সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা এবং আগ্রহ সৃষ্টি। এই সব বৈশিষ্ট্যের কারনে তাবলীগী আন্দোলন রাজনৈতিক ও বস্তুবাদী আন্দোলনে পরিণত হয় নাই। দুনিয়ার সুযোগ সুবিধা পদমর্যাদা লাভ করিবার উপায় হিসাবে পরিগণিত হয় নাই। বরং এই আন্দোলন ও দাওয়াত একটি নির্ভেজাল দ্বীনী দাওয়াত এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হইয়াছেতাবলীগ জামাতের জন্য এবং তাবলীগী দাওয়াতের জন্য যেই সব মূলনীতি এবং উপাদান প্রয়োজনীয় বিবেচনা করা হইয়াছে তাহার সবই কোরআন ও হাদীস হইতে সংগৃহীত। এই সব কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং দ্বীনের হেফাজতের কাজে একজন প্রহরীর ভূমিকা পালন করে। এই গুলির মুল উৎস পবিত্র কোরআন এবং সুন্নাতে রাসূল বা হাদীসে রাছূল সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম।ক্বোরআনে কারীমের বিষয়ভিত্তিক ঐসব আয়াত এবং বিষয়ভিত্তিক হাদীসমূহ একটি গ্রন্থে সন্নিবেশিত করিবার প্রয়োজন অনুভূত হইতেছিল। আল্লাহর শুকরিয়া, এই কাজ তাবলীগী দাওয়াতের দ্বিতীয় দায়ী মাওলানা ইউসুফ সাহেব সম্পন্ন করিয়াছেন। (তিনি প্রথম দাঈ হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) এর উত্তর সূরী)। মাওলানা ইউসুফ ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন। কোরআন ও হাদীসে তাঁহার ব্যুৎপত্তি ছিল ব্যাপক। তিনি তাবলীগী দাওয়াতের মূলনীতি ও উপাদানসমূহ একটি গ্রন্থে সন্নিবেশিত করিয়াছেন। এই ক্ষেত্রে তিনি পরিপূর্ণ মেধা নিষ্ঠা ও অভিনিবেশ প্রয়োগ করিয়াছেন। ফলে এই গ্রন্থ তাবলীগী দাওয়াত, মূলনীতি ও হেদায়েতের একটি সংকলন গ্রন্থই নহে বরং এই ক্ষেত্রে একটি বিশ্বকোষে পরিণত হইয়াছে। সকল হাদীসকে শ্রেণীগত বিভিন্নতা সহ বাছাই ও সংক্ষেপীকরণ ছাড়াই উল্লেখ করা হইয়াছে। তাঁহার সৌভাগ্যবান পুন্যবান পৌত্র স্নেহধন্য মৌলভী সাআদ সাহেব এর মনোযোগ ও প্রচেষ্টায় এই গ্রন্থ প্রকাশিত হইতেছে। ইহা ভাগ্য লিখন এবং আল্লাহ তায়ালার তওফীকেরই ফলশ্রুতি। পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালা তাঁহার এই প্রচেষ্টা এই শ্রম এই খেদমত কবুল করুন। ইহার উপকারিতা ব্যাপকতর করুন।